নবাব সিরাউ দৌলা পরাজয়ের পেছনের কারণ
একটি আত্মসমর্পণশীল মানসিকতার ইতিহাস ও তার পুনরাবৃত্তি
নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে যখন বন্দী করে টেনে হিচঁড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন হাজার হাজার বাঙালি নির্লজ্জ দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করছিল। শুধু তাই নয়, যখন তাকে কাঁটার সিংহাসনে বসিয়ে ছেঁড়া জুতা দিয়ে পেটানো হচ্ছিল, তখনও এই জাতি বিনোদিত হচ্ছিল! এই মনোবৃত্তিই দেখায়, কেন এই জাতি দুই শতাব্দীর দাসত্ব সাদরে মেনে নিয়েছিল।
একটি চমকপ্রদ তথ্য—লর্ড ক্লাইভ তার ডায়েরিতে লিখেছিলেন: “যদি সেই দর্শকরা একটি করেও ঢিল ছুঁড়ত, ইংরেজদের পরাজয় অনিবার্য ছিল।” অথচ সিরাজের বিশাল বাহিনী—১০ হাজার অশ্বারোহী, ৩০ হাজার পদাতিক, অগণিত কামান ও গোলাবারুদ নিয়েও—মাত্র ৩ হাজার ব্রিটিশ সৈন্যের (তাদের মধ্যে ৯০০ জন ছিল আনাড়ি অপেশাদার) বিরুদ্ধে পরাজিত হয়। কেন? কারণ ক্লাইভ জানতেন, এই জাতিকে জয় করতে অস্ত্র নয়, মানসিক দুর্বলতাই যথেষ্ট।
তিনি বুঝেছিলেন—যাদের আত্মসম্মান নেই, তাদের শাসন করতে শক্তি নয়, একটুখানি লোভ আর বিশ্বাসঘাতকতা-ই যথেষ্ট। তাই মীরজাফরদের দিয়ে কাজ সেরে ফেলেছিলেন। মজার ব্যাপার, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—সব বেইমানেরই করুণ পরিণতি হয়েছিল।
ক্লাইভ বাঙালির মানসিকতাকে এত নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করেছিলেন যে বলা যায়—এই জাতির মনস্তত্ত্ব বুঝতে পারা ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি ছিলেন তিনিই। তিনি জানতেন, জয়ী হলে সিরাজকে জনসমক্ষে হেয় করলে এই জাতি তালি দেবে।
এবার মূল কথায় আসি—এই ইতিহাস আমাদের মাঝে অনুরণিত হয় কেন? আমাদের জুম্ম জাতি এই চিত্রের সাথে মেলে না কেন? আমরা কী এসব বাঙালির সঙ্গে থাকতে থাকতে রূপান্তরিত হচ্ছি, না কি আমাদের রক্তেই এখন দুর্বলতা ঢুকে গেছে?
এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের খুঁজতে হবে। কারণ, যারা আজও ক্ষমতা বা টাকার লোভে নিজেদের জাতকে বিক্রি করছে, তারা যেন না ভাবে ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে। ইতিহাস সব মনে রাখে, এবং যারা শিক্ষা নেয় না, তাদের আবারও ইতিহাস বানিয়ে ফেলে।
জুম্মদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আত্মঘাতী জাতির ইতিহাস বারবার পুনরাবৃত্তি হয়। পাহাড়ে এখনো এর প্রমাণ দেখা যায়—৫৪% বাঙালি, মুজিব এবং সেটলারদের উপস্থিতি। যারা এক সময় শ্রমিক ছিল, তারা এখন হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসী নেতা। যারা সরকারের আশ্রয়ে পাহাড়ে এসেছে, তারা এখন নিজেদের আদিবাসী দাবি করে।
আর সেনাবাহিনী? এক সময় যারা পাহাড়ে পোস্টিং পেলে পরিবারে কান্নাকাটি হতো, এখন তারা স্বেচ্ছায় আসে। কারণ পাহাড় তাদের জন্য এখন স্বর্গ। যেখানে ইনকাম, ক্ষমতা আর স্বাধীনতা সব কিছু একসঙ্গে পাওয়া যায়। জাতিসংঘের শান্তিমিশনে গেলে জীবন ঝুঁকি থাকে, পাহাড়ে নয়। পাহাড় এখন তাদের জন্য “দুবাই”।
এই অবস্থার অবসানের প্রথম ধাপ—পর্যটন বন্ধ। এরপরের ধাপগুলো নিয়ে আলোচনা চলবে।
Comments
Post a Comment